কীভাবে সাজেক ভ্যালি যাবেন

Photo: Sajek Valley Bangladesh

সাজেক  বাংলাদেশের এক অনন্য সুন্দর জায়গা। সবুজ মেঘ আর পাহাড়ের অপরুপ সুন্দর দেখতে হলে চলে আসুন সাজেক ভ্যালি। বাংলাদেশের যেকোনো অঞ্চলের আবহাওয়ার সঙ্গে
সাজেকের আবহাওয়া একটু অন্যরকম। সাজেকে এই গরম, এই রোদ এই ঠান্ডা। আসুন জেনে নেই সাজেক ট্যুর প্লান। যা আপনার ভ্রমনকে আরো সুন্দর এবং আরামদায়ক করবে।

সাজেক কীভাবে যাবেন ?


খাগড়াছড়ি জেলা শহর অথবা দীঘিনালা থেকে লোকাল চান্দের গাড়ি/জীপগাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। এই গাড়ি রিজার্ভ করে সাজেক যাওয়া যায়।   এক গাড়িতে ১০/১৩ জন বসতে পারবেন। একদিনে সাজেক ঘুরে চলে আসলে ভাড়া ৫৪,০০ টাকা। এক রাত থেকে চলে আসলে ভাড়া ৭,৭০০ টাকা। দুই রাত থাকলে ভাড়া ১০,০০০ থেকে ১৩,০০০ টাকা।

দিঘীনলা থেকে  বাঘাইহাট হয়ে সাজেক যেতে হয়। বাঘাহাইট আর্মি এবং পুলিশ ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হবে। এটি নেওয়া বাধ্যতামূলক। পথে পড়বে কাসলং ব্রিজ, টাইগাররা টিলা আর্মি ক্যাম্প, মাসলং বাজার। বাজার পার হলেই প্রথমে চোখে পড়বে সাজেকের প্রথম গ্ৰাম রুইলুই পাড়া। এই গ্ৰামের উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট। রুইলুই পাড়া থেকে অল্প সময়ে পৌছে যাবেন সাজেক। 

দিঘীনালা থেকে সিএনজি নিয়ে ও সাজেক যাওয়া যায়। ভাড়া ৪০০০-৫০০ টাকা পড়বে। তবে সিএনজি নিয়ে যাওয়া একটু ঝামেলা। রাস্তা অনেক ঢালু। এছাড়া কম টাকায় যেতে চাইলে প্রথমে খাগড়াছড়ি শহর থেকে দিঘীনালা, ভাড়া ৫০ টাকা নিবে। দিঘীনালা থেকে মোটরসাইকেলে সাজেক, ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা নেয়। তবে ফেরার আগে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প সন্ধ্যার আগেই ছাড়তে হবে। তা না হলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। 

কোথায় থাকবেন ?

সাজেক থাকার জন্য বেশ কিছু রিসোর্ট রয়েছে। এবং আদিবাসীদের কটেজ রয়েছে। প্রতি রাতের জন্য ২০০-১৫০০ টাকা। ছুটির দিনে ভিড় একটু বেশি থাকে তাই এক মাস আগে থেকেই বুকিং দিলে ভালো। 

এছাড়া কম খরচে আদিবাসীদের কটেজে থাকা যায়। এখানকার সব রিসোর্ট এবং কটেজ থেকে ভালো ভিউ পাওয়া যায়। আগের চেয়ে অনেক রিসোর্ট এবং কটেজ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন থাকা নিয়ে সেরকম কোন অসুবিধা হয় না। 

কোথায় খাবেন ?

সাজেকে এখন বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফুডানকি, চিম্বাল রেস্টুরেন্টে, কাশবন রেস্টুরেন্ট, মারুতি দিদির রেস্টুরেন্ট, মনটানার রেস্টুরেন্ট বিখ্যাত। এদের খাবার খেতে বেশ ভালো। এখানে ডাল, ভাত, সবজি এবং দেশি মুরগির প্যাকেজ পাওয়া যায়। খরচ পড়বে ২০০-২৫০ টাকা। এছাড়া আপনি চাইলে রিসোর্ট ও কটেজে থেকেই খাবার খেতে পারবেন। আগে থেকে বলে রাখলে পছন্দ মতো খাবার রান্না করে দিবে। 

সাজেক ট্যুর প্লান

সাজেক ভ্যালি ভালোভাবে উপভোগ করার জন্য ৪ রাত ৩ দিনের প্রয়োজন। তবে আপনার হাতে যদি সময় কম থাকে তবে ৩ রাত ২ দিনেও আপনি ভ্রমণ শেষ করতে পারবেন। ৩ রাত ২ দিনের সাজেক ট্যুর প্লান নিচে দেওয়া হলো।

প্রথম দিন:
রাতের বাসে রওনা দিয়ে খাগড়াছড়ি পৌঁছাবেন। নাস্তা খেয়ে চান্দের গাড়ি অথবা জিপ গাড়ি দিয়ে সাজেক চলে আসবেন। আপনার ইচ্ছা মত রিসোর্ট অথবা কটেজ ভাড়া করে নিবেন। যদি আপনার রিসোর্টে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে বাইরে কোন রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিবেন। 

হালকা বিশ্রাম করে বিকালের দিকে চলে যাবেন হ্যালি প্যাডে। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকবেন এবং তারপর রুমে ফিরে আসবেন। রাতে বারবিকিউ করতে পারেন। আপনার রিসোর্টে এই সুবিধা না থাকলে রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন। রাতে আপনি এক অন্যরকম সাজেক ভ্যালি দেখতে পাবেন। রাতে সাজেক দেখতে অনেক সুন্দর। আর বর্ষাকালে গেলে মনে হবে আপনি মেঘের মধ্যে দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। হ্যালি প্যাডের দিকে যেতে পারেন। ঘোরাঘুরি শেষ হলে রুমে চলে আসবেন।

দ্বিতীয় দিন:
সূর্যোদয়ের অন্তত ৫০ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠে পড়ুন। প্রয়োজন হলে মোবাইলে এলাম সেট করে রাখতে পারেন। এই সময়ে সাজেকের পরিবেশ অনেক সুন্দর লাগে দেখতে। সূর্যোদয়ের পর চলে যাবেন কংকল পাহাড়। আপনি চাইলে হেটে যেতে পারেন। গাড়ি নিয়ে কংকল পাহাড়ের অনেক উপরে উঠতে পারবেন। 

সকালে সাজেকের আকাশে অনেক মেঘ দেখতে পাবেন।কংকল পাহাড়ের চেয়ে বেশি। সেনাবাহিনীর এসকোট সকাল ১০ টায় শুরু হয়। তাই এর আগেই রুম থেকে ফিরে আসুন। ব্যাগ গুছিয়ে চেক আউট করে নাস্তা খেয়ে নিবেন।  এসকর্ট শুরু হলে রওনা দিয়ে খাগড়াছড়ি শহরে চলে আসবেন। দুপুরের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন খাগড়াছড়ি। 

দুপুরের খাবার খাগড়াছড়ি শহরে খেয়ে ব্যাগ বাস কাউন্টারে রেখে খাগড়াছড়ি শহরের আসেপাশে অনেক জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করার সময় এই কথা বলে নিবেন। শহরের আশেপাশে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। সবশেষে রাতের খাবার খেয়ে বাসে উঠে পড়ুন। সবকিছু ঠিক থাকলে সকালের মধ্যে পৌঁছে যাবেন আপনার গন্তব্যে।

Post a Comment

Previous Post Next Post